Micro-Fiction
Microfiction is a genre of storytelling characterized by its extreme brevity while retaining the elements of a complete narrative. It is a form of flash fiction, typically constrained to a very short word count, often ranging from a few sentences to a few hundred words. Despite its compact size, microfiction aims to evoke strong emotions, provoke thought, or deliver a surprising twist, relying on concise language and implied meaning to engage readers.
অসহায়তা
মা ফাতিমা বিবির ফুসফুসের চিকিৎসা করাতে তাকে নিয়ে কলকাতায় এসেছে বছর পঁচিশের ফারুক, ওপারবাংলা থেকে । এ বঙ্গে রাহিম চাচা ছাড়া সে আর কাউকে চেনে না,রহিম তার দেশের লোক তাই থাকার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেছে। কাল সন্ধ্যায় মা কে হসপিটালে ভর্তি করেছে ফারুক,ডাক্তার বলেছে অপারেশন করতে হবে মা এর।মায়ের বড়ো কিছু হয়েছে এ আন্দাজ ছিল ফারুকের তাই দেশের বাড়িতে একমাত্র জমি টুকু বেচে টাকার জোগাড় করেছিল সে। পথের ক্লান্তি সাথে দুশ্চিন্তা, ঠিকমতো নাওয়া খাওয়া হয়নি ফারুকের দুদিন। আজ রহিম চাচা জোর করে হসপিটালের সামনে এক চায়ের দোকানে নিয়ে এক কাপ চা আর একটা রুটি দেয় ফারুকের হাতে ;সাথে মা ঠিক হয়ে যাবার ভরসা। হঠাৎ চেচাঁমেচিতে ফারুক এগিয়ে দেখে এক বয়স্ক মহিলা তার স্বমীকে নিয়ে হসপিটালের গেটে বসে কাঁদছে কিছু মানুষ তাকে উঠতে বলছে আর দুই একটা ছেলে এটার ভিডিও তুলছে ফোনে। জানা যায় মহিলার স্বামীর পা ভেঙে গেছে, রিক্সাওয়ালা এখানে নামিয়ে চলে গেছে ,কেউ সাহায্য করলে ডাক্তারের ঘরে নিয়ে যেতে পারে। সরকারি হাসপাতালে খাতির যত্ন বিশেষ নেই; ফারুক রহিম চাচার কাছে জানতে চায় ওই ছেলে দুটো কিসের ভিডিও করছে এটা কি কোনো সিনেমা ?রহিম চাচা হেসে বলে না বাপজান এটা তোমার কুসুমপুর গ্রাম নয় এখানে মানুষের অসহায়তা ও বিক্রি হয় ভিডিও তে !! চলো আমরা বরংমাইয়াটারে একটু সাহায্য করি ।
সৎ মা
বরাতজোরে হাওড়া থেকে বেরিয়ে প্রিপেইড ট্যাক্সিটা খুব তাড়াতাড়ি পেয়েছিলো অনিন্দ। পরশু মধ্য রাতের দুঃসংবাদ টা শোনার পর থেকে সময় যেন এগোচ্ছেনা কিছুতেই। প্লেনের টিকিট পাওয়া যায়নি তাই বাধ্য হয়ে বাঙ্গলোরের থেকে ট্রেন ধরেছে। অনিন্দর স্ত্রী উপমা নয় মাসের গর্ভবতী সামনেই ডেলিভারি ডেট এইসময় ওকে খবর টা দেওয়া ঠিক হবে না বলেছিলো শাশুড়ি মা। উপমা মামনির খুব কাছের ছিল তাই অনিন্দ ও জোর করেনি ,অফিসের আর্জেন্ট মিটিং বলে এসেছে উপমা কে। একদিন বাড়ির অনেকের আপত্তি থাকলেও মামনি উপমা কে বরণ করে ঘরে তুলেছিল;এমন কি যেদিন বাবা মারা গেছিলো তখন ক্লাস টেনের টেস্ট চলছিল মামনি সেদিন ও সব টা সামলেছিল। সেই মামনির না থাকাটা অনিন্দর মতো উপমার জীবনে ও অপূরণীয় ক্ষতি। স্মৃতির পাতায় চোখ বোলাতে বোলাতে ট্যাক্সি এসেদাঁড়ালো বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের দোতালা বাড়ির গেটে। ঘরে ঢুকতেই নৃপেন জেঠু বললো ওই তো বাবু এসে গেছে ।মামনির মুখে তখনও মিষ্টি হাসি লেগে আছে,ঘুমানো শরীরে শুধু হৃদ যন্ত্রটি স্তব্ধ হয়ে গেছে। ছোটন বললো দাদা আর দেরি করা উচিত হবেনা,মাথা নেড়ে সম্মতি দেয় অনিন্দ। শ্মশানে দূরে দাঁড়িয়ে অনিন্দ ,ছোটন সব সামলাচ্ছে ,এর মাঝেই একটা গুঞ্জন অনিন্দর কানে আসে। মুখাগ্নিটা ছোটনের করা উচিত । এতগুলো বছর যে কথা ভুলে ছিল তা এভাবে এসময় ফিরে আসবে ভাবতেও পারেনি অনিন্দ। শুধু জন্ম দেওয়ার জন্য দুই বছরের ছেলে কে ফেলে চলে যাওয়া মানুষটি সমাজের চোখে মা হয়ে থাকবে আর পঁচিশ বছর নিজের সবটুকু ভালোবাসায় যে বড় করলো সে আজ সৎ মা হয়ে যাবে ?,ঠাকুরমশাই ডাকছে দাদা মায়ের মুখাগ্নি টা এবার সেরে ফেলতে হবে । অনিন্দ ইতস্তত পায়ে এগিয়ে যায়, ছোটনের অধিকার কি সে বঞ্চিত করছে !! জল ভরা চোখে ছোটন বলে আয় দাদা মায়ের ও এটাই ইচ্ছা ছিল। কাজ শেষে সন্ধ্যায় ফোনে দেখে বন্ধু সৌরভের অনেকগুলি মিসকল ,সাথে msg আজ বিকাল পাঁচটায় তোর মেয়ে হয়েছে ,উপমা আর মেয়ে দুজনেই ভালো আছে চিন্তা করিস না। বিষাদের বালুচরে যেন একটুকরো মরুদ্যান দেখা পেলো অনিন্দ যা তার মামনির প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে ।
ত্যাগ
মোবাইল স্ক্রোল করতেই অমিতের চোখ আটকায় তিন্নির একটা পোস্টে। গতবছর রাখীতে তোলা অমিত ও তিন্নির ছবি। তিন্নি অমিতের ছোট বোন। আজ রাখী ,কিন্তু এ বছর অমিতের যাওয়া হয়নি। তার চাকরীতে ছুটিতে বাড়ী আসাই উৎসব। নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের অমিত যেদিন সেনাবাহিনীর চাকরী পেয়েছিল, সেদিন বৃদ্ধ বাবার চোখে ছিল পরম তৃপ্তি,আর ঘর ছাড়ার দুঃখে মায়ের চোখ ভিজেছিল অব্যক্ত বেদনায়। চাকরির প্রথমে উৎসবে প্রিয়জনের দূরত্বে অমিতের মনও ভারাক্রান্ত হয়ে উঠত, পাহাড়ি শূন্যতায় এখন মন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সামনের মাসের ২০ তারিখে তিন্নির বিয়ে। গত ছুটিতে অমিত তার এক মাস্টার বন্ধুর সঙ্গে সম্বন্ধ ঠিক করে এসেছিল। সেই মত বিয়ের সাত দিন আগে অমিতের বাড়ি যাবার কথা। বাড়ির একমাত্র ছেলে অমিত তার আদরের ছোট বোনের বিয়ে তে কোনো সাধ অপূর্ণ রাখবে না ঠিক করেছে,কিন্তু সন্ধ্যায় তার এক সহকর্মী এসে জানায় উপর মহল থেকে নির্দেশ এসেছে ভারত চীন সীমান্তে যুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে তাই আগামী সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে। খবরটা শুনে বরফে ঢাকা পাহাড়ের মত কেমন একটা ভারী চাপ অনুভূত হলো অমিতের বুকের উপর। বাইরে তখন স্বচ্ছ নীলাকাশে পূর্ণিমার চাঁদে উজ্জ্বল ভারতীয় তিরঙ্গা দেখা যাচ্ছে,যে তিরঙ্গার সামনে ব্যক্তি স্বার্থ তুচ্ছ হয়ে যায়,অন্তরে অনুভূত হয় বিমূর্ত নাড়ির টান। যা নির্দ্বিধায় সব কিছুর উর্ধ্বে নিয়ে যায় একজন সৈনিকের মন কে।
সম্পর্ক
সকালের পুজো সেরেই শিবানী দেবী রান্নাঘরে জলখাবার বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মেয়ে ইন্দ্রানীর প্রিয় লুচি আর কালোজিরে ফোরণের সাদা আলুর তরকারি বানাবেন আজ। হোস্টেলের খাবার খিদে মেটালেও আবদার মেটাতে পারে না; তা শুধু মায়ের কাছেই মেটে। ইন্দ্রানী ছুটিতে বাড়ি এলে আলোক বাবু ও শিবানী দেবী আদর যত্নের কোনো ঘাটতি রাখেন না। ঘড়িতে ন’ টা বাজলে শিবানী দেবী ইন্দ্রানীকে ডাকতে গেলে আলোক বাবু বলেন, মেয়েটাকে আর একটু ঘুমাতে দাও গিন্নি, পড়ার চাপে ওখানে তো ঘুম হয় না ভালো।” ইঞ্জিনিয়ারিং-র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইন্দ্রানীর চিন্তা ভাবনাকে আলোক বাবু বরাবর সমাদর করে এসেছেন, তাই মেডিকেলে ভালো ফল করেও স্বাধীনভাবে বেছে নিয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং। বাবার সাথে গল্পে সকালের খাবার খেতে খেতে টেলিভিশনে চলতে থাকা খবরে চোখ পড়ে দুজনের। এক বিখ্যাত অভিনেতা নিজের তৃতীয় বিবাহ বিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করছে। “সমাজের কি দুর্দিন আসতে চলেছে!”– বাবার কথা শেষ না হতেই ইন্দ্রানী বলে দুজন মানুষ একসাথে মিলে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এতে অসুবিধা কোথায় বাবা? “দুজন মানুষ দুজনের ভাবনা বুঝবে, সম্মান করবে তবে একটা সম্পর্ক সুন্দর হয়ে ওঠে; তা সে পুরুষ হোক বা নারী। সম্পর্কের ভিত মজবুত থাকলে কোনো অপ্রাপ্তি সেখানে বাসা বাঁধে না রে মা।” বাবার কথাগুলো ইন্দ্রানীর মন স্পর্শ করে। তার কলেজের ম্যা’ম শ্রুতিলেখার কথা মনে পড়ে তার। আধুনিক সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হলেও কোথাও যেন শূন্যতা রয়ে গেছে ম্যা’মের। কলেজের বাইরে চল্লিশোর্ধ শ্রুতিলেখার সাথে ইন্দ্রানীর সম্পর্ক বেশ ভালো। স্বামী, সন্তানের বিচ্ছেদে অজানা শহরে ইন্দ্রানী হয়ে উঠেছিল শ্রুতিলেখার ভালোবাসার মানুষ। স্বল্পভাষী, মিশুকে স্বভাবের ইন্দ্রানীও ম্যা’মের মধ্যে অপত্য স্নেহের গন্ধ পায়। পাশের ঘর থেকে মোবাইলটা নিয়ে এসে মা বলে, “কখন থেকে রিং হচ্ছে শুনতে পাসনি?” ফোন হাতে নিয়ে ম্যা’মের এসএমএস দেখে ইন্দ্রানী, “অরিন্দম হসপিটালে, আমি কলকাতা আসছি।” অরিন্দম স্যার ম্যা’মের স্বামী, কলেজে এক ব্যাচের ছিল দুজনে। ইন্দ্রানী বুঝলো সম্পর্কের ভিত মজবুত না হলে এতদিন পর এভাবে ফেরে না কেউ!